বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহমদকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির কথিত ‘উস্তাদ জাফর’ বদিরই মাদক ও অপরাধ জগতের সেনাপতি হিসেবে পরিচিত বলে জানিয়েছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩ টায় রাজধানী ঢাকার বাসাবো এলাকার একটি বাসা থেকে র্যাব ১৫ ও ৩ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে বলে জানিয়েছেন র্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান।
গ্রেপ্তার জাফর আহমদ (৬৭), টেকনাফের সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুরবিল এলাকার মৃত সুলতান আহমেদের ছেলে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, টেকনাফের ভয়ংকর ইয়াবা সিন্ডিকেটের সম্রাট বদির ডান হাত হিসেবে পরিচিত ছিল সাবেক আলোচিত উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর। গত ১৭ বছর সংসদ সদস্য থাকাকালে ইয়াবা বদি নিজের নির্বাচনী এলাকা টেকনাফকে পরিণত করেছিলেন মাদক, চোরাচালান, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যার স্বর্গরাজ্যে। আর সেই স্বর্গরাজ্য কার্যক্রমের বিশ্বস্ত সহচর ছিল জাফর। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বদি ম্যাজিকে দ্বিতীয় বারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাফর। সরকার পতন হলে ১৯ আগস্ট দুই মাসের মাথায় স্বপদ হতে তাকে অপসারিত করা হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রদের বিরুদ্ধে সকল হামলা ও কুকীর্তির নেতৃত্বে ছিলেন এই জাফর। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরপর টেকনাফের ঝর্নাচত্বর এলাকায় ছাত্র জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালায় জাফরসহ তার তিন সন্তান দিদার, শাহজাহান ও ইলিয়াস। হামলার সময় তার তিন সন্তানদের হাতে দুটি শর্টগান ও একটি পিস্তল দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। গত ১৮ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলার অন্যতম আসামি এই মাফিয়া জাফর। এই মামলার প্রধান আসামি ইয়াবা গডফাদার বদি ইতিপূর্বে র্যাবের হাতে আটক হলেও তার বিশ্বস্ত সহযোগী জাফর এতদিন অধরাই ছিল। র্যাব তাকে গ্রেপ্তারের জন্য সব সময় সচেষ্ট ছিল। অবশেষে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, সরকার পতনের জের ধরে গত ৫ আগস্ট রাতে টেকনাফে বিএনপি নেতার মালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জাফরের নেতৃত্বে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট এর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় পৃথকভাবে তিনটি মামলার রুজু করা হয়েছে যার প্রায় সবকটিতেই জাফরকে আসামি করা হয়েছে।
মো. কামরুজ্জামান বদির অপরাধ জগতের বিশ্বস্ত সহচর জাফর প্রথম জীবনে ছিলেন পান বাজারের শ্রমিক। সেখান থেকে হয়ে উঠেন শ্রমিক নেতা নামধারী দুর্র্ধর্ষ চাঁদাবাজ। এই চাঁদাবাজির অর্থে সে টেকনাফ সদরের সদস্য নির্বাচিত হয়। এরপর থেকে তার আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর কৌশলে বিএনপি রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে টেকনাফ সদর ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যান তিনি। কালের পরিক্রমায় জাফর নানারূপে আবির্ভূত হয়ে ইয়াবা বদির বিশ্বস্ত হাতিয়ার হয়ে মাদক সাম্রাজ্য সম্প্রসারনপূর্বক অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময়ের পর জাফর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ বাগিয়ে নেন এবং বদির কারিশমায় চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। এরপর জেলা পরিষদ সদস্য ও ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবারো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উক্ত নির্বাচনে ইয়াবা বদি ও জাফরের বিরুদ্ধে ভোট ক্রয়, ভোট চুরি সহ ব্যালট পেপার ছিনতাই এর অভিযোগ রয়েছে।
জাফরের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, দুদকের মামলা সহ এক ডজন মামলা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কযয়েকটি মামলায় সে জামিনে থাকলেও অধিকাংশ মামলাই বিচারাধীন। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এক মামলায় বিপুল পরিমাণ আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। এছাড়াও সরকার পতনের জের ধরে দায়ের হওয়া নাশকতা মামলা গুলোতে সে এতদিন পলাতক আসামি ছিল এবং গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন স্থানে ছদ্মবেশ ধারণ করে আত্মগোপনে ছিল।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে ১২৭৫ জন মাদক কারবারিকে তালিকাভুক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে ইয়াবা বদি ও তার ঘনিষ্ঠ সহচর জাফর কে ইয়াবা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের মূল কারিগর হিসেবে ধরা হয় জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে চিহ্নিত শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফরের নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে পুরো দমে ইয়াবা ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে। ২০১৯ সালে আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারীরা পুনরায় জামিনে বের হয়ে জাফরের নেতৃত্বে আবার সঙ্গবদ্ধ হয়েছে এবং ইয়াবা ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছে। জাফরকে টেকনাফ থানায় সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply